মানবের সদ্ধর্ম (পর্ব- ২)
                                                         সুলেখা বড়ুয়া


স্বাকখাতো ভগবতো ধম্মো - ভগবান বুদ্ধের ধর্ম সুন্দররুপে ব্যাখাত, সাক্ষাত করার মতো ব্যবস্থা আছে বুদ্ধের ধর্ম সাক্ষাত করতে হলে সর্বপ্রথমে প্রার্থনা করতে হবে শুদ্ধভাবে

কিভাবে প্রার্থনা করলে শুদ্ধ হয়-

বুদ্ধ-ধর্ম-সংঘের যেমন গুণাবলী আছে, তেমনি প্রার্থনারও গুণাবলী আছে



পঞ্চশীল, অষ্টশীল, দশশীল এবং নির্বাণ (বিদর্শন ভাবনা করার জন্য প্রার্থনা) প্রার্থনা করার সময় অনেকে হাত পায়ের উপরে রাখে, হাত এবং পা এক জিনিস নয়, মাথার উপর ছাতা খুলে, টুপি দিয়ে, কাপড় দিয়ে, কিংবা  জুতা-সেন্ডেলের উপর দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করলে শ্রদ্ধার ব্যাঘাত হয়



প্রার্থনার গুণাবলী পাঁচটি - যথা শ্রদ্ধা, শীল, শ্রুতি, ত্যাগ প্রজ্ঞা





আলোতালো (অগোছালো) বেশে, হেলান দিয়ে এবং শুয়ে শুয়ে নীরোগী ব্যক্তি প্রার্থনা করলেও অশ্রদ্ধা হয় হাতগুলো মাথার উপর চলে গেলে আবার মাথা যদি নীচের দিকে ফেলে রেখে করলেও শ্রদ্ধা হয়না সুন্দর করে বসে, যেটা যেখানে রাখার প্রয়োজন সেখানে রেখে প্রার্থনা করলে শারীরিক ভাবে এটাই শ্রদ্ধার প্রথম লক্ষণ



বুদ্ধের ধর্ম সাক্ষাত করার জন্য ত্রিরত্ন বন্দনা করি প্রতিদিন কেন করি তা যথার্থ বোধগম্য না হলে প্রার্থনা কিংবা বন্দনার পুণ্যফলেরও তারতম্য ঘটে

দৃষ্টান্তস্বরূপ - বুদ্ধং বন্দামি - আমি বুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করিতেছি



সুপটিপন্নো - সুপ্রতিপন্ন - স্রোতাপন্ন,



বুদ্ধের প্রথম মার্গ স্রোতাপন্ন লাভী হচ্ছে এক রকমের বুদ্ধ ( যে চারি অপায় দ্বার রুদ্ধ করে) সম্যক সম্বুদ্ধ নয় তবে, এক প্রকারের বুদ্ধ বা জ্ঞানী, তাই বুদ্ধকে সম্মান করিতেছি - "বুদ্ধং বন্দামি"

ধম্মং বন্দামি - বুদ্ধের ধর্ম লাভ করার জন্য আমি ধর্মকে সম্মান করিতেছি - "ধম্মং বন্দামি"

সংঘং বন্দামি - বুদ্ধের সংঘ সদস্য হবো, বুদ্ধের সংঘ হচ্ছে

উজ্জুপটিপন্নো - ঋজুপ্রতিপন্ন - সকৃদাগামী,



বুদ্ধের ধর্ম নিতান্তই স্বজ্ঞালব্ধ, এখানে কোন প্রকার অলৌকিক কিংবা কুসংস্কারের স্থান নেই



ঞায়পটিপন্নো - ন্যায়প্রতিপন্ন - অনাগামী,

সামীচিপটিপন্নো - সমীচীন প্রতিপন্ন - অর্হৎ,

আহুণেয্যো - আহুনেয় - আহবানেয়,

পাহুনেয্যো - পাহুনেয় - পাহুনক,

দক্ষিনেয্যো - দক্ষিনেয় - দক্ষিণা গ্রহণের যোগ্য, অঞ্জলিকরনীয্যো - অঞ্জলিকরণীয়,

অনুত্তরং পুঞকেখত্তং - অনুত্তর অসদৃশ - পুণ্যক্ষেত্র, অতএব সংঘ সদস্য হওয়ার জন্য সংঘকে সম্মান করিতেছি - "সংঘং বন্দামি"



স্বভাবত ধর্ম ত্রিবিধ, পরিয়ত্তি, পটিপত্তি পটিবেধ



তবে তুমি নিশ্চয়রুপে জানিও, ইহা ধর্ম নহে, বিনয় নহে, শাস্তা নহে, শাসন নহে"



বুদ্ধবাক্য ত্রিপিটক পরিয়ত্তি ধর্ম

তের প্রকার ধুতাংজ্ঞব্রত, চৌদ্দ প্রকার খন্ধক ব্রত বিরাশি প্রকার মহাব্রত - পটিপত্তি ধর্ম

চারি আর্যমার্গ চারিফল - পটিবেধ ধর্ম



ভগবান বুদ্ধ ভাষিত ধর্ম আদি, মধ্য অন্তে কল্যাণ ফলপ্রদ

বুদ্ধ গৌতমীকে বলেছেন - "গৌতমী তুমি সমস্ত ধর্ম ধারণ করবে,

তদ্বারা যদি কামরাগ উৎপন্ন হয়, বিরাগ উৎপন্ন হয়না, সংযোগ সাধন করে, বিসংযুক্ত করেনা,

আসক্তি উৎপাদন করে, অনাসক্ত করেনা,





"ভিক্ষুগণ বুদ্ধের একটি মাত্র পথ, যেই সত্বা আচরণ করিবে, সেই সত্বাই বিশুদ্ধ লাভ করিবে একমাত্র বিশুদ্ধ লাভীই নির্বাণ লাভ করিতে পারিবে ভগবান বুদ্ধের উক্তি উদানে এবং অঙ্গুত্তর নিকায়ে দেখা যায় "সেয্যথাপি ভিকখবে মহাসমুদ্দো একরসো লোনরসো এবমেব খো ভিকখবে অযং ধম্ম বিনয়ো একরসো বিমুক্তিরসো" - অর্থাৎ, হে ভিক্ষুগণ "যেমন মহাসমুদ্র এক রসে লবণ রসে রসিত, তেমনি এই সমগ্র ধর্ম বিনয় (বুদ্ধবচন) একরসে বিমুক্ত রসেই রসিত" সেই বিমুক্তির দিক নির্দেশনা ত্রিপিটকের অভিধর্ম পিটকই অভিপ্রেত যাহা বুদ্ধের দর্শন নামে খ্যাত মূল গ্রন্থ বা ধর্ম



আবার কুশল অকুশল ধর্মের অতীতাবস্থা নির্বাণ দেখিয়ে বলেছেন "ভিক্ষুগণ তোমাদেরকে ধর্ম সমূহও ত্যাগ করতে হবে, অধর্ম ত্যাগ করতে তো হবেই, অধর্ম বা ধর্ম সবই অকুশল কুশল ধর্ম তা পাপ-পুণ্য কাজেই পাপ-পুণ্য সবই অবিদ্যা" বুদ্ধের ধর্ম একমাত্র পরমার্থ ধর্ম



তাই বুদ্ধের ধর্ম সঠিকভাবে পাওয়ার একটি মাত্র পথ ভিক্ষুদের নিকট প্রকাশ করিয়াছেন



                                               নির্বাণ পরম সুখ

                                               সকল প্রাণী সুখী হোক



বিঃ দ্রঃ - বিদর্শন ভাবনা চলাকালীন দেশনার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের আলোকে এবং উৎস গ্রন্থ- সদ্ধর্ম পরিচিতি বিদর্শনাচার্য তেমিয়ব্রত বড়ুয়া চলমান.........