⭐️⭐️⭐️আটানাটিয় সূত্র⭐️⭐️⭐️
(২য় পর্ব)
আটানাটিয়া সূত্রটির বাংলানুবাদ যোগ করে দ্বিতীয় পর্বটি আপলোড করে পোষ্ট করলাম। সূত্রের দ্বিতীয় পর্বে মূল বিষয় বস্তু অনুবাদটি পাঠ করলে সবিস্তার বুঝতে পারবেন। অতএব, ডাউন্ডলোড করুন; প্রতিদিন সকাল-বিকাল সূত্রটি বাজিয়ে শ্রবণ করুন এবং ধৈর্যসহকারে সূত্রের অনুবাদটি অন্তত একবার হলেও পড়ে দেখুন- মঙ্গল হবে। পরবর্তী অন্যান্য সূত্রগুলোও ধারাবাহিক আপলোড করব, পেইজটি তে ✅Like✅ দিন, সঙ্গে থাকুন।
🙏সেই ভগবান অরহত সম্যক সম্বুদ্ধকে নমস্কার🙏
💫ভগবানের উক্তি💫
১। তদনন্তর ভগবান রাত্রির অবসানে ভিক্ষুগণকে সম্বোধন করিলেন, “ভিক্ষুগণ, রাত্রিকালে চারি মহারাজ বৃহৎ যক্ষসেনাবাহিনীসহ গন্ধর্বসেনা, কুম্ভণ্ডসেনা এবং নাগসেনা দ্বারা চতুর্দিকে রক্ষিদল, সেনাব্যূহ এবং পরিভ্রমণকারী প্রহরী স্থাপন করিয়া রাত্রির অবসানে অত্যুজ্জ্বল দেহপ্রভায় সমগ্র গৃধ্রকূট পর্বত উদ্ভাসিত করিয়া যেখানে আমি ছিলাম সেখানে উপস্থিত হইলেন; উপস্থিত হইয়া আমাকে অভিবাদন করিয়া একপাশে উপবেশন করিলেন। ভিক্ষুগণ, সেই যক্ষগণ কেহ কেহ আমাকে অভিবাদন করিয়া একপাশে উপবেশন করিলেন। কেহ কেহ আমার সহিত মধুর চিত্তরঞ্জক বাক্যালাপ করিয়া একপাশে উপবেশন করিলেন। কেহ কেহ আমার দিকে অঞ্জলি প্রণত করিয়া একপাশে উপবেশন করিলেন। কেহ কেহ আপনাদের নাম গোত্র প্রকাশ করিয়া একপাশে উপবেশন করিলেন। কেহ কেহ মৌন হইয়া একপাশে উপবেশন করিলেন।
২। ভিক্ষুগণ, একপাশে উপবিষ্ট মহারাজ বৈশ্রবণ আমাকে বলিলেন, ভন্তে, প্রখ্যাত যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি অপ্রসন্ন, ওইরূপ যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি প্রসন্ন; মধ্যম শ্রেণির যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি অপ্রসন্ন, ওইরূপ যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি প্রসন্ন; নিম্ন শ্রেণির যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি অপ্রসন্ন। ওইরূপ যক্ষগণ আছেন যাহারা ভগবানের প্রতি প্রসন্ন। কিন্তু যাহারা ভগবানে অপ্রসন্ন তাহাদের সংখ্যাই অধিক। কী কারণে? ভগবান প্রাণাতিপাত হইতে বিরতির উপদেশ দেন; অদত্তের গ্রহণ হইতে বিরতির উপদেশ দেন, ব্যভিচার হইতে বিরতির উপদেশ দেন; মৃষাবাদ হইতে বিরতির উপদেশ দেন, সুরাদি মদ্যপান হইতে বিরতির উপদেশ দেন। ভন্তে, যক্ষদিগের মধ্যে যাহারা ওই সকল কর্মে বিরত নহে তাহাদের সংখ্যাই অধিক। এই জন্যই ভগবানের উপদেশ তাহাদের নিকট অপ্রিয়, ও অমনোজ্ঞ। ভগবানের শ্রাবকগণ আছেন যাঁহারা দূর অরণ্যে বনপ্রস্থে বাস করেন, যেইস্থানে শব্দ নাই, নির্ঘোষ নাই, যেইস্থানে বিজন বাত প্রবাহিত, যেইস্থানে মনুষ্য সমাগম রহিত, যাহা ধ্যানানুশীলনের উপযুক্ত। তথায় প্রতিষ্ঠাবান যক্ষগণ বাস করেন যাহারা ভগবানের এই উপদেশে শ্রদ্ধাহীন। যাহাতে তাহারা শ্রদ্ধাবান হয় সেই নিমিত্ত ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী এবং উপাসক ও উপাসিকাগণের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য, তাহাদের অনিষ্ট দূরীকরণ ও স্বচ্ছন্দ বিহারের জন্য ভগবান আটানাটিয় রক্ষা মন্ত্রের ঘোষণা অনুমোদন করুন।
আমি মৌন দ্বারা সম্মতি জ্ঞাপন করিলাম। অনন্তর ভিক্ষুগণ, মহারাজ বৈশ্রবণ আমার মৌন সম্মতি অবগত হইয়া সেই সময় এই আটানাটিয় রক্ষামন্ত্র উচ্চারণ করিলেন :
৩। চক্ষুষ্মান শ্রীমান বিপস্সিকে নমস্কার।
সর্বভূতানুকম্পী সিখিকেও নমস্কার।
স্নাতক তপস্বী বেস্সভূকে নমস্কার।
মারসেনা-প্রমর্দনকারী ককুসন্ধকে নমস্কার।
পূর্ণব্রহ্মচর্য্য ব্রাহ্মণ কোনাগমনকে নমস্কার।
সর্বরূপে বিমুক্ত কস্সপকে নমস্কার।
শাক্যপুত্র শ্রীমান অঙ্গীরসকে নমস্কার,
তিনি সর্বদুঃখ মোচনকারী ধর্মের উপদেশ দিয়াছেন।
যাঁহারা এই জগতে নির্বৃত, যাঁহারা যথার্থদর্শী,
তাঁহারা প্রিয়বাদী, মহান ও প্রশান্ত।
তাঁহারা দেবমনুষ্যগণের হিতকামী
বিদ্যাচরণসম্পন্ন, মহান,
প্রশান্ত গৌতমকে নমস্কার করেন।
৪। যেইস্থান হইতে মহান, মণ্ডলী,
আদিত্য সূর্যের উদয় হয়,
যাহার উদয়ে সর্বরীও নিরুদ্ধ হয়, এবং যাহার
উদয় “দিবস্তু উক্ত হয়, সেইস্থানে এক গভীর
জলাশয়- জলপ্রবাহের আধার সমুদ্র। এইরূপে
উহা “জলপ্রবাহের আধার সমুদ্র” কথিত হয়।
এই স্থান হইতে “উহা পূর্বদিক” এইরূপ জনগণ
বলিয়া থাকে। ওই দিকের পালনকর্তা যশস্বী-
গন্ধর্বাধিপতি মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র, তিনি গন্ধর্বগণ
পরিবেষ্টিত হইয়া নৃত্যগীতে রত থাকেন। তাঁহার
বহুপুত্র, সকলেই একই নামবিশিষ্ট, এইরূপ শ্রুত হয়,
তাহাদের সংখ্যা একনবতি, তাঁহারা মহাবলশালী
এবং ইন্দ্রনামধারী। তাঁহারাও মহান প্রশান্ত
আদিত্য-বন্ধু বুদ্ধকে দেখিয়া দূর হইতে তাঁহাকে
নমস্কার করেন। “হে পুরুষশ্রেষ্ঠ, তোমাকে
নমস্কার, হে পুরুষোত্তম, তোমাকে নমস্কার, তুমি
আমাদের প্রতি মঙ্গলময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করো,
অমনুষ্যগণও তোমার বন্দনা করে!” আমরা ইহা
সর্বদা শ্রবণ করি, সেইহেতু এইরূপ বলিতেছি,
“বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করো, আমরা বিজয়ী
গৌতমের বন্দনা করিতেছি, বিদ্যাচরণসম্পন্ন বুদ্ধ
গৌতমের বন্দনা করিতেছি।”
৫। যেইস্থানে যাহারা প্রেত কথিত হয়, যাহারা ক্রুর,
পৃষ্ঠমাংসখাদক, প্রাণহিংসারত, রুদ্র, চোর ও
প্রবঞ্চক, তাহারা বাস করে, সেইস্থান এখান হইতে
“দক্ষিণ দিকে”, জনগণ এইরূপ বলিয়া থাকে।
কুম্ভণ্ডগণের অধিপতি বিরূঢ় নামক যশস্বী মহারাজ
ওই দিক পালন করেন, কুম্ভণ্ডগণ পরিবেষ্টিত
তিনি নৃত্যগীতে রত থাকেন। আমি শুনিয়াছি
তাহার একই নামধারী বহুপুত্র, তাহাদের সংখ্যা
একনবতি, তাঁহারা ইন্দ্রনামধারী ও মহাবলসম্পন্ন।
তাঁহারাও মহান প্রশান্ত আদিত্য-বন্ধু বুদ্ধকে
দেখিয়া দূর হইতে তাঁহাকে নমস্কার করেন।
“হে পুরুষশ্রেষ্ঠ, তোমাকে নমস্কার, হে পুরুষোত্তম!
তোমাকে নমস্কার, তুমি আমাদের প্রতি মঙ্গলময়
দৃষ্টি নিক্ষেপ করো, অমনুষ্যগণও তোমার বন্দনা করে!”
আমরা ইহা সর্বদা শ্রবণ করি, সেইহেতু এইরূপ
বলিতেছি, “বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করো, আমরা
বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করিতেছি, বিদ্যাচরণসম্পন্ন
বুদ্ধ গৌতমের বন্দনা করিতেছি।”
৬। “যে স্থানে মহান, মণ্ডলী, আদিত্য সূর্যের অস্তগমন
হয়, যাহার অস্তগমনে দিবসও নিরুদ্ধ হয়, এবং
রাত্রির আবির্ভাব হয়, সেইস্থানে এক গভীর
জলাশয়-জলপ্রবাহের আধার সমুদ্র। এইরূপে
উহা “জলপ্রবাহের আধার সমুদ্র” কথিত হয়।
এইস্থান হইতে “উহা পশ্চিম দিক” এইরূপ জনগণ
বলিয়া থাকে। ওই দিকের পালনকর্তা যশস্বী
নাগাধিপতি মহারাজ বিরূপাক্ষ, তিনি নাগগণ
কর্তৃক পরিবেষ্টিত হইয়া নৃত্যগীতে রত থাকেন।
আমি শুনিয়াছি তাঁহার একই নামধারী বহুপুত্র,
তাঁহাদের সংখ্যা একনবতি, তাঁহারা ইন্দ্রনামধারী
ও মহাবল সম্পন্ন। তাঁহারাও মহান, প্রশান্ত
আদিত্য-বন্ধু বুদ্ধকে দেখিয়া দূর হইতে তাঁহাকে
নমস্কার করেন। “হে পুরুষশ্রেষ্ঠ, তোমাকে
নমস্কার, হে পুরুষোত্তম, তোমাকে নমস্কার,
তুমি আমাদের প্রতি মঙ্গলময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করো,
অমনুষ্যগণও তোমার বন্দনা করে!”
আমরা ইহা সর্বদা শ্রবণ করি, সেইহেতু এইরূপ বলিতেছি, “বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করো,
আমরা বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করিতেছি,
বিদ্যাচরণসম্পন্ন বুদ্ধ গৌতমের বন্দনা করিতেছি।”
৭। “যে স্থানে রমণীয় উত্তর কুরু এবং সুদর্শন সুমেরু
পর্বত সেইস্থানে মনুষ্যগণ বাস করে যাহারা
নিঃস্বার্থ এবং “আমার” বলিয়া নারীতে স্বত্ব স্থাপনে বিরত।
তাহারা বীজ বপন করে না, হলকর্ষণও করে না,
স্বয়ংজাত শালি আহার করে। তাহারা কণহীন,
তুষহীন, শুদ্ধ, সুগন্ধ তণ্ডল উখাতাপে সিদ্ধ করিয়া
আহার করে। তাহারা গাভীকে একোপযুক্ত
যানে পরিণত করিয়া উহাতে আরোহণপূর্বক
দিকে দিকে ভ্রমণ করে, পশুদলকেও ওইরূপে
চালিত করিয়া স্থান হইতে স্থানান্তরে গমন করে,
স্ত্রী, পুরুষ, কুমারী ও কুমারগণ ওইরূপ যানযোগে
গমনাগমন করে, স্বীয় যানে আরোহণ করিয়া
তাহারা রাজসেবায় সর্বদিকে ভ্রমণ করে। যশস্বী
মহারাজের নিমিত্ত হস্তীযান, অশ্বযান, দিব্যযান,
প্রাসাদ ও শিবিকাসমূহ রক্ষিত।
আটানাটা, কুসিনাটা, পরকুসিনাটা, নাটপুরিয়া,
পরকুসিতনাটা নামক তাঁহার নগরসমূহ অন্তরীক্ষে
সুনির্মিত। উত্তরে কপীবন্ত, জনোঘ, নবনবতিয়
এবং অম্বর-অম্বরবতিয় নামক অপরাপর নগর এবং
রাজধানী আলকমন্দা। আয়ুষ্মান, মহারাজ
কুবেরের বিষাণা নামক রাজধানী। তজ্জন্য
মহারাজ কুবের “বেতস্সবণ” (বৈশ্রবণ), উক্ত হন।
যাহারা তাহার রাজবার্তা বহনপূর্বক উহার
ঘোষণা করেন তাহাদের নাম ততোলা, তত্তলা,
ততোতলা, ওজসি, তেজসি, ততোজসি, সূর,
রাজা অরিষ্ট এবং নেমি। ওইস্থানে ধরণী নামক
জলাশয় হইতে মেঘের উৎপত্তি হইয়া বর্ষণ হয়,
বৃষ্টিপাত হয়। ওই স্থানের ভগলবতি নামক
সভায় যক্ষগণ পূজা করেন। ওই স্থানে ময়ূর-
ক্রৌঞ্চণ্ডকোকিলাদির মধুর কণ্ঠ-ধ্বনিত, নানা
বিহঙ্গম সমাকুল, নিত্য ফলবান বৃক্ষরাজি বিদ্যমান।
ওই স্থানে “জীব” জীব” পক্ষীর রব শ্রুত হয়,
বনদেশ ওট্ঠব-চিত্তক-কুকুত্থক-পোক্ষর
সাতকাদির দ্বারা কূজিত। এই স্থানে শুক
ও সারিকার শব্দ শ্রুত হয়, দণ্ড-মানবক নামক পক্ষী
দৃষ্ট হয়, সর্বদা সর্বকালে কুবের-নলিনী-শোভমান
হয়। এই স্থান হইতে “উহা উত্তর দিক”
এইরূপ জনগণ বলিয়া থাকে। ওই দিকের
পালনকর্তা যশস্বী যক্ষাধিপতি মহারাজ কুবের,
তিনি যক্ষগণ কর্তৃক পরিবেষ্টিত হইয়া নৃত্যগীতে
রত থাকেন। আমি শুনিয়াছি তাঁহার একই
নামধারী বহু পুত্র, তাঁহাদের সংখ্যা একনবতি,
তাঁহারা ইন্দ্র নামধারী ও মহাবলসম্পন্ন। তাঁহারাও
মহান, প্রশান্ত, আদিত্য-বন্ধু বুদ্ধকে দেখিয়া দূর
হইতে তাঁহাকে নমস্কার করেন। “হে পুরুষশ্রেষ্ঠ,
তোমাকে নমস্কার, হে পুরুষোত্তম। তোমাকে
নমস্কার, তুমি আমাদের প্রতি মঙ্গলময় দৃষ্টি নিক্ষেপ
কর, অমনুষ্যগণও তোমার বন্দনা করে।”
আমরা ইহা সর্বদা শ্রবণ করি, সেইহেতু এইরূপ
বলিতেছি, “বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করো, আমরা
বিজয়ী গৌতমের বন্দনা করিতেছি, বিদ্যাচরণসম্পন্ন
বুদ্ধ গৌতমের বন্দনা করিতেছি।”
৮। “ভন্তে, ইহাই ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী, উপাসক ও উপাসিকাগণের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য, তাহাদের অনিষ্ট দূরীকরণ ও স্বচ্ছন্দ বিহারের জন্য আটানাটিয় রক্ষামন্ত্র।
“ভন্তে, যেকোন ভিক্ষু অথবা ভিক্ষুণী, উপাসক অথবা উপাসিকা এই আটানাটিয় রক্ষামন্ত্র উত্তমরূপে শিক্ষা করিবেন, সম্পূর্ণরূপে হৃদয়স্থ করিবেন, তাঁহাকে যদি কোনো অমনুষ্য, যক্ষ অথবা যক্ষিণী, যক্ষ-বৎস অথবা বৎসা, যক্ষ-পারিষদ অথবা যক্ষ-সেবক, গন্ধর্ব অথবা গন্ধর্বী, গন্ধর্ব-বৎস অথবা বৎসা, গন্ধর্ব-পারিষদ অথবা গন্ধর্ব সেবক, কুম্ভণ্ড অথবা কুম্ভণ্ডী, কুম্ভণ্ড-বৎস অথবা বৎসা, কুম্ভণ্ড-পারিষদ অথবা কুম্ভণ্ড সেবক। নাগ অথবা নাগিনী, নাগ বৎস অথবা বৎসা, নাগ পারিষদ অথবা নাগ-সেবক। প্রদুষ্ট চিত্তে গমনে, দণ্ডায়মানে, উপবেশনে অথবা শয়নে অনুসরণ করে, (বিপর্যস্ত করায়) তাহা হইলে, ভন্তে, সেই অমনুষ্য মদীয় গ্রাম বা নগরে সৎকার অথবা সম্মান পাইবে না। ভন্তে, সেই অমনুষ্য আমার রাজধানী আলকমন্দায় বাসভূমি অথবা বাসগৃহ পাইবে না। যক্ষদিগের সভায় সে গমন করিতে পাইবে না। সে আবাহের নিমিত্ত কন্যা পাইবে না এবং বিবাহের নিমিত্ত তাহার কন্যা কেহ গ্রহণ করিবে না। অধিকন্তু, ভন্তে, সে অমনুষ্যগণের নিকট প্রভূতরূপে উপহাসের পাত্র হইবে। অমনুষ্যগণ রিক্তভাজনের ন্যায় তাহার মস্তক বিপর্যস্ত করিবে, সপ্তধা বিদীর্ণ করিবে।
“ভন্তে, কোনো কোনো অমনুষ্য আছে যাহারা চণ্ড, রুদ্র, দুর্দান্ত। তাহারা মহারাজগণের বশ্যতা স্বীকার করে না, তাহাদের ঊর্ধ্বতন কর্মচারীগণের অথবা ওই সকলের অধীনস্থগণের বশবর্তী নহে। তাহারা মহারাজগণের বিদ্রোহীরূপে জ্ঞাত। যেইরূপ মগধরাজের রাজ্যে যে-সকল মহাচোর আছে, তাহারা মগধরাজের বশ্যতা স্বীকার করে না, তাহার ঊর্ধ্বতন কর্মচারীগণের অথবা ওই সকলের অধীনস্থগণের বশবর্তী নহে, যেইরূপ ওই সকল মহাচোর মগধরাজের বিদ্রোহী কথিত হয়, সেইরূপ অমনুষ্যগণ আছে যাহারা চণ্ড, রুদ্র, দুর্দান্ত। তাহারা মহারাজগণের বশ্যতা স্বীকার করে না, তাহাদের ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদিগের অথবা ওই সকলের অধীনস্থগণের বশবর্তী নহে এবং মহারাজগণের বিদ্রোহী কথিত হয়। যদি কোনো অমনুষ্য, যক্ষ অথবা যক্ষিণী, যক্ষ-বৎস অথবা বৎসা, যক্ষ-পারিষদ অথবা যক্ষ-সেবক, গন্ধর্ব অথবা গন্ধর্বী, গন্ধর্ব-বৎস অথবা বৎসা, গন্ধর্ব-পারিষদ অথবা গন্ধর্ব সেবক, কুম্ভণ্ড অথবা কুম্ভণ্ডী, কুম্ভণ্ড-বৎস অথবা বৎসা, কুম্ভণ্ড-পারিষদ অথবা কুম্ভণ্ড সেবক। নাগ অথবা নাগিনী, নাগ বৎস অথবা বৎসা, নাগ পারিষদ অথবা নাগ-সেবক। প্রদুষ্ট চিত্তে কোনো ভিক্ষু অথবা ভিক্ষুণী, উপাসক অথবা উপাসিকাকে গমনে, দণ্ডায়মানে, উপবেশনে অথবা শয়নে অনুসরণ (বিপর্যস্ত) করে, তাহা হইলে তাঁহাকে এই সকল যক্ষ, মহাযক্ষ, সেনাপতি, মহা-সেনাপতিগণকে এইরূপে উদ্দীপিত করিতে হইবে, তাঁহাদের উদ্দেশে আর্তনাদ করিতে হইবে, উচ্চরবে তাঁহাদিগকে বলিতে হইবে, “এই যক্ষ আমাকে ধৃত করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে আক্রমণ করিতেছে, এই যক্ষ আমার অনিষ্ট করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে আঘাত করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে মুক্তি দিতেছে না।”
৯। “কোন কোন যক্ষ, মহাযক্ষ, সেনাপতি, মহাসেনাপতিগণকে?
ইন্দ্র, সোম, বর্বণ, ভারদ্বাজ, প্রজাপতি,
চন্দন, কামসেট্ঠ, কিন্নু ঘণ্ডু, নিঘণ্ডু,
পণাদ, ওপমঞ্ঞ, দেবসূত মাতলি,
গন্ধর্ব চিত্রসেন, রাজা নল, জনেষভ
সাতাগির, হেমবত, পুণ্ণক, করতিয়, গুল,
সীবক, মুচলিন্দ, বেস্সামিত্ত যুগন্ধর
গোপাল, সূপ্পগেধ, হিরী, নেত্তী, মন্দিয়,
পঞ্চাল-চণ্ড আলবক, পজ্জুন্ন, সুমন, সুমুখ,
দধিমুখ, মণি, মণিচর, দীঘ,
এই সকলের সহিত সেরিতস্সক।
“এই সকল যক্ষ, মহাযক্ষ, সেনাপতি, মহাসেনাপতিগণকে এইরূপে উদ্দীপিত করিতে হইবে, তাঁহাদের উদ্দেশে আর্তনাদ করিতে হইবে, উচ্চরবে তাঁহাদিগকে বলিতে হইবে, “এই যক্ষ আমাকে ধৃত করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে আক্রমণ করিতেছে, এই যক্ষ আমার অনিষ্ট করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে আঘাত করিতেছে, এই যক্ষ আমাকে মুক্তি দিতেছে না।”
“ভন্তে, ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী এবং উপাসক ও উপাসিকাগণের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য, তাঁহাদের অনিষ্ট দূরীকরণ ও স্বচ্ছন্দ বিহারের জন্য ইহাই আটানাটিয় রক্ষামন্ত্র।”
“এক্ষণে, ভন্তে, আমরা বিদায় লইব, আমাদের বহু কৃত্য, বহু করণীয় আছে।”
“মহারাজগণের যেইরূপ অভিরুচি।”
১০। অনন্তর ভিক্ষুগণ, চারিমহারাজ আসন হইতে উত্থানপূর্বক আমাকে অভিবাদন ও প্রদক্ষিণ করিয়া সেইস্থানে অন্তর্ধান করিলেন। যক্ষগণের মধ্যেও কেহ কেহ আসন হইতে উত্থানপূর্বক আমাকে অভিবাদন ও প্রদক্ষিণ করিয়া সেইস্থানে অন্তর্ধান করিলেন। কেহ কেহ আমার সহিত মধুর চিত্তরঞ্জক বাক্যালাপান্তে সেই স্থানেই অন্তর্ধান করিলেন। কেহ কেহ ভগবানের দিকে অঞ্জলি প্রণত করিয়া সেইস্থানেই অন্তর্ধান করিলেন, কেহ কেহ আপনাদের নাম-গোত্র প্রকাশ করিয়া অন্তর্ধান করিলেন। কেহ কেহ তূষ্ণীম্ভাব অবলম্বন করিয়া সেইস্থানেই অন্তর্ধান করিলেন।
১১। “ভিক্ষুগণ, আটানাটিয় রক্ষামন্ত্র শিক্ষা করো, সম্পূর্ণরূপে হৃদয়স্থ কর; এই মন্ত্র ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী এবং উপাসক ও উপাসিকাগণের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য, তাহাদের অনিষ্ট দূরীকরণ ও স্বচ্ছন্দ বিহারের জন্য অর্থপূর্ণ।
ভগবান এইরূপ বলিলেন। সেই ভিক্ষুগণ সন্তুষ্ট হইয়া ভগবানের ভাষণ অভিনন্দন করিলেন।
"সমাপ্ত"
0 Comments